বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা লাভ করে। তৎপর একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র কাঠামো গঠন ও আইনের শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে বিচার প্রশাসনের কল্যাণার্থে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।
সময়ের সাথে সাথে বিচার প্রশাসনের পরিধি ও কার্যক্ষেত্র বৃদ্ধি পাওয়ায় সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন ও বিচার বিভাগ গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিগত ২০০৮-২০১৩ মেয়াদের মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুবিধার্থে বিগত ২৭ মে ২০০৯ তারিখে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় গৃহিত সর্বসম্মত সুপারিশের প্রেক্ষিতে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ নামে এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ০২ (দুই) টি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
অধস্তন বিচার বিভাগ, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, অন্যান্য বিভিন্ন বিশেষ আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল, নিবন্ধন অিধিদপ্তর, অ্যাটর্নি-জেনারেলের কার্যালয়, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেলের অফিস এবং অফিসিয়াল ট্রাস্টি (এজিওটি), জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়, বিবাহ রেজিস্ট্রার, গভর্নমেন্ট প্লিডার, পাবলিক প্রসিকিউটর, নোটারি পাবলিক ইত্যাদির প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা আইন ও বিচার বিভাগ করে থাকে।
বিশেষ করে এই বিভাগের নিম্নলিখিত দায়িত্ব রয়েছে:-
- যেকোন মামলা থেকে উদ্ভূত সকল আইনগত ও সাংবিধানিক প্রশ্ন এবং সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন সহ যে কোন আইনের ব্যাখ্যার বিষয়ে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরকে পরামর্শ।
- আন্তর্জাতিক বিচার আদালত সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং নারী ও শিশুদের পাচার এবং অশ্লীল প্রকাশনা এবং অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধীদের চিকিৎসা সম্পর্কিত জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংস্থার রেফারেন্সসহ বিচারিক বিষয়ে অন্যান্য দেশের সাথে কনভেনশন।
- সকল আদালতের (রাজস্ব আদালত ব্যতীত) এবং ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার ও ক্ষমতা;
- আদালত ও বিচার বিভাগীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ এবং চাকরির শর্তাবলী।
- আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে নেওয়া ফি; বিচারিক স্ট্যাম্প; কোর্ট-ফি এবং স্ট্যাম্প শুল্ক।
- আইনী-কার্যক্রম এবং তার উপর পরামর্শ।
সরকারী আইন কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়; অ্যাটর্নি-জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি-জেনারেল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারী আইনজীবী, পাবলিক প্রসিকিউটর, বিশেষ প্রসিকিউটর এবং সমস্ত সংবিধিবদ্ধ কর্পোরেশন এবং সংস্থার আইনী উপদেষ্টাদের নিয়োগ এবং পরিসেবার শর্তাবলী। - বিবাহ নিবন্ধক ও নোটারি পাবলিক নিয়োগ, অপসারণ, ইত্যাদি।
- সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালে সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা।
- অ্যাডমিনিস্ট্রেটর-জেনারেল এবং অফিসিয়াল ট্রাস্টি নিয়োগ এবং পরিসেবার শর্তাবলী; অফিসিয়াল রিসিভার।
- দেওয়ানী মামলায় সমন প্রদান এবং দেওয়ানী আদালতের ডিক্রি কার্যকর, রক্ষণাবেক্ষণের আদেশ কার্যকর করার জন্য এবং বাংলাদেশে মারা যাওয়া বিদেশীদের সম্পত্তির প্রশাসনের জন্য বিদেশী দেশের সাথে পারস্পরিক চুক্তি।
- সরকার কর্তৃক বা বিরুদ্ধে মামলায় দাবী বা লিখিত বিবৃতি স্বাক্ষর ও যাচাই করার জন্য কর্মকর্তাদের অনুমোদন।
- সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি, ইত্যাদি।
- এই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর ও সংস্থার প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ।
- আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সাথে যোগাযোগ এবং অন্যান্য দেশ এবং বিশ্ব সংস্থাগুলির সাথে এই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত বিষয়গুলির সাথে চুক্তি এবং চুক্তি সম্পর্কিত বিষয়গুলি।
এই বিভাগের কিছু বিশেষ সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপঃ-
- বাংলাদেশের অ্যাটর্নি-জেনারেল নিয়োগ (অনুচ্ছেদ- ৬৪)।
- অ্যাটর্নি-জেনারেলের কাছে দায়িত্ব অর্পণ, তার পারিশ্রমিক নির্ধারণ এবং তার পদের অবসান (অনুচ্ছেদ- ৬৪(২) এবং (৪))।
- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ ও পদত্যাগ (অনুচ্ছেদ- ৯৫ (১))।
- বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ (অনুচ্ছেদ- ৯৬(২))।
- সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পরবর্তী সিনিয়র বিচারক কর্তৃক প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন (অনুচ্ছেদ- ৯৭)।
- সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত বিচারকদের নিয়োগ ও পদত্যাগ (অনুচ্ছেদ- ৯৮)।
- রাজধানী ছাড়া অন্য স্থানে হাইকোর্ট বিভাগের দায়রা ধারণ (অনুচ্ছেদ- ১০০)।
- আইনের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের মতামত প্রাপ্তি (অনুচ্ছেদ- ১০৬)।